গাজীপুরে চোর সন্দেহে বেধড়ক মারধর, অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা!
গাজীপুর প্রতিনিধিঃ মোবাইল চুরির অপবাদে পাষবিক নির্যাতনের শিকার হন নজরুল ইসলাম (৪৫)। গ্রাম্য সালিশে, ভুরুলিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা জাহানারা বেগমের বাসা থেকে মোবাইল চোর সন্দেহে নজরুলকে ডেকে নিয়ে জাহানারার বাসায় দিনভর আটকে রেখে হাতুরি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। সন্দেহভাজন চোর হিসেবে নজরুলকে বেদড়ক পেটায় কার্তিক চন্দ্র দে ও জাহানারার স্বামী আব্দুল মালেকসহ স্থানীয় লোকজন। নজরুলকে মারধরের ঘটনার বর্ণণা দিতে গিয়ে শিউরে উঠেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও বাঁশ বেত দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর যেন-নির্মমতাকেও হার মানায়। গত ১১ এপ্রিল গাজীপুর মহানগরীর ২৫ নং ওয়ার্ড মধ্য ভূরুলিয়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এরপর ১৭ এপ্রিল রবিবার নজরুলকে আবারও মারধর করেন তার ছোট ভাই জহিরুল। এমন সব অপমান সইতে না পেরে লজ্জায় ফ্যানের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন নজরুল। আত্মহত্যার রহস্য জনমনে সন্দেহের জাল ছড়াচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আত্মহত্যার এ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেন স্থানীয় কাউন্সিলর মো. মুজিবুর রহমান সরকার। পুলিশকে না জানিয়ে জানাজা পড়িয়ে লাশ দাফনের চেষ্টা চালান তিনি। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশ মাটি দিতে না দিয়ে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। নজরুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাতুড়ি ও লাঠির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, নিহত নজরুল ইসলাম (৪৫) মধ্য ভূরুলিয়া এলাকার মৃত নান্নু মিয়ার সন্তান। প্রথমে সদর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার ও সন্দেহভাজন চোর হিসেবে মারধরের ঘটনা জানার পর কঠোর অবস্থানে থাকলেও রাতারাতি পাল্টে যায় সব। পরের দিন নিহতের স্ত্রী মোছা: পারভীন মেট্রোপলিটন সদর থানা বরাবর ‘অপমৃত্যুর সংবাদ প্রসঙ্গে’ বিষয়ে একটি আবেদন করেন। আবেদনে ঘটনাটিকে সম্পূর্ণ উল্টো পথে প্রবাহিত করা হয়। আবেদনটিতে পারভীন উল্লেখ করেন, ১৭ এপ্রিল রবিবার তার স্বামী নজরুল নেশা করার জন্য ২৫০ টাকা চান। টাকা না দেয়ায় নজরুল বাড়িতে ভাংচুর এবং আত্মহত্যার হুমকি দেন। পরে পারভীন বাড়ির পাশে ধান কাটতে গেলে নজরুল ফ্যানের আড়ার সঙ্গে ঝুলে ফাঁস নেন। পরে কাউন্সিলসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশে খবর দেয়। বস্তুত এ ঘটনার সাথে বাস্তবে ঘটে যাওয়া ঘটনার কোন মিল নেই। কারণ কাউন্সিলর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়েছেন এবং আত্মহত্যার ঘটনাটি থানায় জানাতেও চাননি পারভীন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, মূলত কাউন্সিলরের ভয় অথবা অর্থনৈতিক সুবিধা নজরুলের স্ত্রী ঘটনাটি অস্বীকার করে মিথ্যা আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। নজরুল অমানুষিক মারধর থেকে আত্মহত্যার বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা করছেন এলাকাবাসী। নিহতের স্ত্রী পারভীন প্রতিবেদককে বলেন, ১১ এপ্রিল জাহানারার বাসায় আমার স্বামীকে বেদড়ক মারধর করা হয়। তখন কাউন্সিলরের সামনে আমার স্বামী বলেছিলেন- আমি এই মুখ আর কাউকে দেখাবো না। পরে গত ১৭ এপ্রিল ফ্যানের আড়ার ঝুলে আমার স্বামী নজরুল গলায় ফাঁস নেন। ‘অপমৃত্যুর সংবাদ প্রসঙ্গে’ বিষয়ে আবেদনের ব্যাপারে তিনি কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান সরকারের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী বলছে, আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যারা নজরুলকে মোবাইল চোর সন্দেহে পিটিয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করলে মৃত্যুর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী। তবে পুলিশ বলছেন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।